করোনাভাইরাস সংক্রমণ থাকলেও ঝিমিয়ে পড়া অবস্থা থেকে অর্থনীতি আবার সচল হয়ে উঠছে। আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের পাশাপাশি বাড়ছে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং লেনদেন। করোনা সংক্রমণ শুরুর আগের অবস্থায় ফিরেছে ব্যাংকিং লেনদেন।
এক শাখা থেকে অন্য শাখায় বা অন্য ব্যাংকের গ্রাহককে পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থাপিত রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট বা আরটিজিএস, স্বয়ংক্রিয় চেক নিকাশ ঘর (বিএসিএইচ) এবং ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (ইএফটিএন)- এই তিন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন গ্রাহক। বাংলাদেশে গত মার্চে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন। মার্চের শেষ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। ওই সময়ে ব্যাংকিং লেনদেন ব্যাপক কমে আসে। তবে জুনে এসে পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। দেশে করোনা শুরুর আগের মাস ফেব্রুয়ারির তুলনায় গত জুনে ওই তিন প্ল্যাটফর্মে লেনদেন ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়ে তিন লাখ ৮২ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা হয়েছে। এই লেনদেন গত বছরের জুনের তুলনায় ২৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি। এসবের বাইরে মোবাইল ব্যাংকিং এবং ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ ব্যবস্থায় ব্যক্তিপর্যায়ে আন্তঃব্যাংক এটিএম, পস ও ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে লেনদেনও বেড়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানার অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম সমকালকে বলেন, আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং সরকারের প্রণোদনার ঋণ বিতরণের ফলে লেনদেন বাড়ছে। বাঙালি জাতি যে দুর্যোগ মোকাবিলা করে সামনে এগোতে পারে, এটা তার প্রমাণ। তিনি বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ব্যাপক বাড়ছে। সেই অর্থ ভাঙিয়ে মানুষ বাজার-সদাই করছেন, জামা-কাপড় কিনছেন বা বাড়িঘর করছেন। সেই টাকা আবার ঘুরে ব্যাংকে আসছে। এভাবে লেনদেনে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে বিএসিএইচের মাধ্যমে মোট দুই লাখ ৪ হাজার ২৯১ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে এ উপায়ে লেনদেনের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৮৫ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। মার্চে প্রায় একই রকম লেনদেন হলেও এপ্রিল ও মে মাসে লেনদেনের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকার নিচে নামে। ব্যবসায়িক লেনদেন পরিশোধের জন্য এ মাধ্যম ব্যবহার হয়ে থাকে।
আন্তঃব্যাংকে তাৎক্ষণিক ব্যবসায়িক পরিশোধ ব্যবস্থা তথা আরটিজিএসের মাধ্যমে গত জুনে এক লাখ ৪৯ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে এক লাখ ১৮ হাজার ৮৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়। মার্চে তা ৯৭ হাজার ২৯৮ কোটি টাকায় নেমে আসে। আর এপ্রিলে আরটিজিএস থেকে একটি লেনদেনও হয়নি। মে মাসে লেনদেন হয় মাত্র দুই হাজার ১৭৪ কোটি টাকা।
চেক ছাড়াই গ্রাহকের সম্মতি বা ইনস্ট্রাকশনের বিপরীতে লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থাকে বলা হয় ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক বা ইএফটিএন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা পরিশোধে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশ প্রদান, রেমিট্যান্স বিতরণ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ভাতা, কর এবং বিভিন্ন বিল পরিশোধ হয়ে থাকে এ উপায়ে। ইএফটিএনের মাধ্যমে গত জুনে মোট ২৮ হাজার ৯২৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে এ ব্যবস্থায় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। অবশ্য সাধারণ ছুটিতে ঘরবন্দি থাকার সময় গত এপ্রিল ও মে মাসে এ উপায়ে আরও বেশি লেনদেন হয়েছিল। এপ্রিলে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। মে মাসে ছিল ৪৪ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বা এনপিএসবি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এক ব্যাংকের গ্রাহক আরেক ব্যাংকের এটিএম, পস ও আন্তঃব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারেন। এ উপায়ে প্রতি মাসে গড়ে দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। গত বছরের একই সময়ে এ উপায়ে লেনদেনের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার মতো।
মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেলে গত জুনে মোট ৪৪ হাজার ৮৩১ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এ পরিমাণ লেনদেন এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ ৪৭ হাজার ৬০১ কোটি টাকা লেনদেনের রেকর্ড হয় গত মে মাসে। আর করোনার প্রভাব শুরুর আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে এ উপায়ে মোট ৪১ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়। মার্চে লেনদেন কমে ৩৯ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকায় নেমেছিল। এপ্রিলে তা আরও কমে ২৯ হাজার ২৯ কোটি টাকায় নামে।
Leave a Reply